পাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তাদের দুটি সংগঠন আর থাকছেনা। পাস্ট ডিরেক্ট অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডরা) এখন থেকে অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাথে কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবার (২৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন থেকে কিছু কর্মকর্তা বের হয়ে পাস্ট ডিরেক্ট রিক্রুটেড অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) নামে একটি সংগঠন খোলেন। পরে এই সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে পাস্ট ডিরেক্ট অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডরা) করা হয়। তখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা দুই ভাগ হয়ে যায়। এরপর গত ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয় যেটা ঐ সময় আলোচনা ছড়িয়েছে। এরপর কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার বিরোধ তৈরী হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ জুন তারিখ থেকে অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের ১৫ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করার সময় ডিরেক্ট অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দপ্তর থেকে বদলি করার জন্য দাবি তোলেন অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন। এ সময় দাবি আদায়ের জন্য তারা টানা ১০ দিন আন্দোলন করেন এবং আন্দোলনের শেষ দিন তারা উপাচার্য কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা মেরে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। আন্দোলন চলাকালে ৩০ জুন অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্মকে তার কক্ষ থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
ঐ সময় ডিরেক্ট অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের যদি বদলি বাতিল সহ ৫ দফা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারক লিপি দেন ডিরেক্ট অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডরা)। এ সময় তাদের ৫ দফা অনুযায়ি ব্যবস্থা না নিলে তারা আন্দোলনে যাবেন বলে হুশিয়ারি দেন।
রেজিস্ট্রারকে কক্ষ থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য ১ জুলাই উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনের নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খানকে আহ্বায়ক এবং প্রক্টর ড. কামাল হোসেনকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি তৈরী করা হয়।
কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সমস্যা সমাধানের জন্য কমিটি কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের সাথে কয়েক দফা মিটিং করেন। রোববার (২৮ জুলাই) উপ-উপাচার্য কার্যালয়ের মিটিংয়ে ডিরেক্ট অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডরা) বিনা শর্তে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে রাজি হয়। পরে উপাচার্য কার্যালয়ে উপাচার্যের উপস্থিতিতে কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের সাথে আহ্বায়ক কমিটির মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তারা অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাথে কাজ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাস্ট ডিরেক্ট অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডরা)’র আহ্বায়ক জিএম শামসাদ ফখরুল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন আমাদের হাতেই গড়া। কিছু ভুল বুঝাবুঝির জন্য আমরা এখান থেকে বের হয়ে নতুন একটা সংগঠন করতে বাধ্য হই। গত কয়েকদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের সাথে আমাদের কয়েক দফা মিটিং হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ এবং দেশের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন থেকে আমাদের সংগঠনের সবাই অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাথে কাজ করবে।’
অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ ডন বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে কখনোই কর্মকর্তাদের দুটি সংগঠন চাইনি। এই সংগঠনের শুরু থেকেই আমরা এর বিরোধিতা করে আসছি। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে এই সংগঠনটি তৈরী হয়েছে এবং শুরু থেকেই এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে। শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুঝতে পেরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তাদের দুটি সংগঠন থাকলে প্রশাসনের জন্যই ক্ষতি। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই উদ্যোগি হয়ে কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপকে একত্রিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরোধ না থাকুক এটা আমরাও চাইনা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘গতকালকেই আমরা মিটিং করেছি। মিটিংয়ে কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপ এখন থেকে মিলেমিশে চলার জন্য সম্মত হয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তাদের জন্য শুধু ‘পাস্ট অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন’ থাকবে বলেই তারা একমত হয়েছেন।’
পাঠকের মতামত